ভাপ্রেস।।
চট্টগ্রাম থেকে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে ছেড়ে যাওয়া ৮টি জাহাজ নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে। প্রায় ৪ ঘণ্টা যাত্রা শেষে শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে পৌঁছায় সেখানে। এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে জাহাজগুলো রওনা দেয়।
ভোরে বাসে করে নৌবাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের পতেঙ্গার বার্ড, আরআরবি ও বোট ক্লাব জেটিতে নিয়ে যান। পরে সেখানে থাকা জাহাজে ওঠানো হয় তাদের। যাত্রার আগে বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই নিজেদের ইচ্ছাতেই কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে যাওয়ার কথা জানান। পাশাপাশি ভাসানচরে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকারও আশা প্রকাশ করেন। যাত্রাপথে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দেয় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন।
বৃহস্পতিবার উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে ২৩টি বাসে করে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে চান এমন রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য মজুত করা হয়েছে ৬৬ টন খাদ্যসামগ্রী। এর আগে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম ঘিরে বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপ ঘুরে আসে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধি দল। কক্সবাজারের আশ্রয় শিবির ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন এমন এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের ভাসানচরের অবকাঠামো তৈরি করে সরকার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, রোহিঙ্গাদের সার্বিক কল্যাণের জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট সামনে রেখে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ায় উদ্বিগ্ন সরকার। ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রসঙ্গ তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সরকার এ ব্যবস্থা নিয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব আরো জানান, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের কারিগরি মিশনের দুটো দলকে আগামী বছর নাগাদ সেখানে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া জানুয়ারিতে আগ্রহী রাষ্ট্রদূতদের ভাসানচর পরিদর্শনে নিয়ে যাবে সরকার।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, স্বেচ্ছায় যেতে চাইলে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেবার পূর্ণ অধিকার রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। ব্রিটিশ হাইকমিশনার আরো বলেন, ভাসানচরে যে অবকাঠামো বাংলাদেশ সরকার তৈরি করেছে তা প্রশংসনীয়। রোহিঙ্গাদের সেখানে নেয়ার প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণে রেখেছে ব্রিটেন। তবে সেখানে নেয়ার আগে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় জরুরি। এজন্য জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী কারিগরি মিশনের প্রতিনিধিদের ভাসানচর পরিদর্শন করতে দেয়ার আবশ্যকতা রয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হওয়াতেই নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে বলেও মনে করে ব্রিটিশ হাইকমিশন। এছাড়া দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনের পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানামের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোয় জোর দিচ্ছে যুক্তরাজ্য।
তবে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করে, ভাসান চরে স্থানান্তর করা হবে এমন অন্তত ১২টি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন তারা। যাদের নাম তালিকায় রয়েছে তারা স্বেচ্ছায় স্থানান্তর হতে চান না বলে মানবাধিকার সংস্থাটিকে জানিয়েছেন। এই তালিকায় থাকা কিছু শরণার্থী জোর করে স্থানান্তরিত হওয়ার ভয়ে পালিয়েছেন বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি।
Leave a Reply